২৫ বছরের সম্পর্ক শেষ
পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর। স্বার্থ ছাড়া এখানে আর কিছুই যে নেই, তা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াস। এই ক্লাবকে কী দেননি! কত জয়, কত শিরোপা- সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বের সেরা একটি ক্লাবে পরিণত হতে এই ক্যাসিয়াসেরও যে কম অবদান ছিল না! কিন্তু স্রেফ স্বার্থের কারণেই ২৫ বছরের সম্পর্ক নিমেষে শেষ হয়ে গেলো ইকার ক্যাসিয়াস আর রিয়াল মাদ্রিদের। ক্যাসিয়াস এখন থেকে আর রিয়ালের নন, পর্তুগিজ ক্লাব এফসি পোর্তোর।
বয়সটাকেও আর বেধে রাখা গেলো না। এক এক করে ৩৪টি বসন্ত পার করে ফেলেছেন ক্যাসিয়াস। এই বয়সে তো অনেক ফুটবলার ক্যারিয়ার শেষ করে শুরু করে দেন কোচিং ক্যারিয়ার। সেই বয়সে এখনও স্পেনের মত সাবেক বিশ্বজয়ী দলের গোলপোস্ট সামলাচ্ছেন ক্যাসিয়াস। সামলিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদেরও গোলপোস্ট।
কিন্তু গত তিনটি বছর সত্যিই ভালো কাটেনি ক্যাসিয়াসের রিয়াল ক্যারিয়ার। কখনও কোচদের সুনজরে না থাকা, কখনও নিজের ভুল- সব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদও সাফল্যের দেখা পাচ্ছিল না। সব মিলিয়ে সদ্য সমাপ্ত মৌসুম শেষেই ক্যাসিয়াসের রিয়াল ক্যারিয়ার নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠে যায়। মৌসুম শেষ হতে না হতেই বাতাসে গুঞ্জন বেসে বেড়াতে শুরু করে ক্যাসিয়াসের রিয়াল ছাড়া নিয়ে। তিনি নিজে ছাড়তে না চাইলেও, রিয়াল মাদ্রিদ যে তাকে ছেড়ে দিতে চায়!
শেষ পর্যন্ত যবনিকাপাত ঘটলো বাতাসে ভাসা সব গুঞ্জনের। রিয়াল মাদ্রিদ আনুষ্ঠানিকভাবেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, ক্যাসিয়াসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শেষ করে ফেলার কথা। অথচ, লজ ব্লাঙ্কোজদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বাকি ছিল ক্যাসিয়াসের।
রিয়াল মাদ্রিদ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রিয়াল মাদ্রিদ এবং এফসি পোর্তো ক্যাসিয়াসের ট্রান্সফারের বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদের জন্য আজ একটা অবশ্যই দুখের এবং স্মরনীয় দিন। কারণ, ক্লাবের এমনকি দেশের (স্পেনের) ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা গোলরক্ষককে বিদায় জানাতে হচ্ছে আমাদেরকে। নতুন শুরু করার জন্যই ক্যাসিয়াস রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যাচ্ছেন।’
রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকেই জানানো হয়, রোববার স্থানীয় সময় দুপুরের কিছুক্ষণ পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন ক্যাসিয়াস। ১৯৯০ সালে রিয়ালের ইয়থ একাডেমিতে ভর্তি হন ক্যাসিয়াস। এরপর থেকে এই ক্লাবেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যান তিনি এবং লজ ব্লাঙ্কোজদের উপহার দেন মোট ১৭টি বড় শিরোপা। ১৯৯৯ সালে রিয়ালের সিনিয়র দলের অভিষেকের পর গত ১৬ বছরে খেলেন ৭২৫টি ম্যাচ। রাউল গঞ্জালেজের (৭৪১) পরই তার অবস্থান।
একটি বিশ্বকাপ, দুটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপসহ ক্যাসিয়াস জেতেন মোট ৫টি লা লিগা শিরোপা, সাথে তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং দুটি কোপা ডেল রে শিরোপাও। রিয়াল মাদ্রিদ তাদের বিবৃতিতে ক্যাসিয়াসের প্রশংসাও করেছে। তারা লিখেছে, ‘ইকার ক্যাসিয়াস তার ক্যারিয়ার দিয়ে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় উদাহরণ তৈরী করে গেলেন। ভবিষ্যতে মেইন রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে থাকবে তার নামই। সম্মান, মর্যাদা এবং দর্শকদের ভালবাসা সবই হলো তার অর্জণ। সে হয়তো চলে যাচ্ছে, তবে তিনি একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবেন আমাদের ক্লাবের ইতিহাসে।’
এই মুহূর্তে এখানে কোনো মন্তব্য নেই, আপনি কি একটি মন্তব্য দেবেন?
মন্তব্য লিখুন