তাইজুলের রেকর্ড ম্যাচে বাংলাওয়াশ
এমন গৌরব ক্রিকেট ইতিহাসে আর কোন ক্রিকেটারই দেখাতে পারেননি। অনেক রথি-মহারথির আগমণ ঘটেছে ক্রিকেটে। অনেকে অনেক রেকর্ড করে ইতিহাসের পাতা সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। সবার ওপরে এখন শুধুই তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশের স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স স্পিনার এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়ায়। ক্রিকেট ইতিহাসে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়ে ফেলা প্রথম ক্রিকেটার।
জিম্বাবুয়ের পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড, জন নিয়াম্বুকে এলবিডব্লিউ এবং তেন্দাই চাতারাকে বোল্ড করে ওয়ানডে ক্রিকেটে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বাংলাদেশের স্পিনার। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে আরও তিনটি হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটেছে। শাহাদাত হোসেন, আবদুর রাজ্জাক এবং রুবেল হোসেন হ্যাটিট্রক করার গৌরব অর্জণ করেছিলেন।
তবে কেউই অভিষেকে নয়। এমনকি বিশ্বের আর কোন বোলার অভিষেকে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করতে পারেননি। এ পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৬টি (তাইজুলের হ্যাটট্রিকসহ) হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গাই সর্বোচ্চ তিনবার এই কীর্তি গড়েছিলেন। এছাড়া পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, শ্রীলংকার চামিন্দা ভাস দু’বার করে হ্যাটট্রিকের গৌরব অর্জন করেন। কিন্তু কেউই অভিষেকে এই গৌরব অর্জণ করতে পারেননি, যেটা পারলেন বাংলাদেশের তাইজুল ইসলাম।
ওয়ানডে ক্রিকেটে হ্যাটট্রিকের ছড়াছড়ি শুধুই পেসারদের। সেখানে এতদিন ব্যাতিক্রম ছিলেন পাকিস্তানের সাকলায়েন মোস্তাক, বাংলাদেশের আবদুর রাজ্জাক, জিম্বাবুয়ের প্রসপার উতসেয়া। এবার এ তালিকায় যোগ হলেন বাংলাদেশের আরও একজন, তাইজুল ইসলাম।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পুরোটাই খেলেছিলেন তাইজুল। ঢাকা টেস্টে আবার দেশের হয়ে রেকর্ডও গড়েছিলেন তিনি। সাকিব আল হাসানকে টপকে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব এখন শুধুই এই বাঁ হাতি স্পিনারের।
কিন্তু ওয়ানডে সিরিজের প্রথম চার ম্যাচেই ছিলেন সাইডলাইনে। অবশেষে শেষ ম্যাচে এসে সুযোগ পেলেন প্রথমবারেরমত ওয়ানডে ক্যাপ পরার। সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করলেন। চতুর্থ বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়লেন গৌরবময় হ্যাটট্রিকের।
জিম্বাবুয়েকে ১২৮ রানের মধ্যে বেধে ফেলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব তাইজুল ইসলামের। ২৭তম ওভারে সলোমন মিরেকে আউট করে অভিষেকটা স্মরনীয় করে রাখার প্রথম ধাপ শুরু তাইজুলের। একই ওভারের শেষ বলে বোল্ড করে ফেরান পানিয়াঙ্গারাকে।
২৯ ওভারে বল করতে এসেই প্রথম বলে এলবির ফাঁদে ফেলেন নিয়াম্বুকে। দ্বিতীয়টিই ছিল কাংখিত মাইলফলকে পৌঁছার বল। বোল্ড করলেন তেন্দাই চাতারাকে। হয়ে গেল ইতিহাস। বোলিং ফিগার ৭-২-১১-৪।
টেস্টের পর জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডে সিরিজেও (৫-০ ব্যবধানে) হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে অভিষেক ওয়ানডেতে বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তাইজুল ইসলামের হ্যাটট্রিকের সুবাদে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে।
মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। মূলত তাইজুল, সাকিব ও জুবায়ের স্পিন ঘূর্ণির সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি সফরকারী ব্যাটসম্যানরা।
বলতে গেলে তাইজুলের বোলিংয়েই গুঁড়িয়ে গেছে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। আর অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক গড়েছেন তিনি। সব মিলে পেয়েছেন ৪টি উইকেট। এ ছাড়া সাকিব ৩টি ও জুবায়ের পেয়েছেন ২টি উইকেট। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ৫২ রান করেছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। এ ছাড়া টেলর ৯, সিবান্দা ৩৭ ও মারুমা ১ রান করেছেন। তবে অলআউট হওয়ার আগে ১২৮ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
জবাবে খেলতে নেমে সহজেই লক্ষ্য টপকে গেছে বাংলাদেশ। ৫ উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
লো স্কোরিং ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সর্বোচ্চ হার না মানা ৫১ রান করেন। এছাড়া সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান।
জিম্বাবুয়ের হয়ে চাতারা তিনটি ও পানিয়াঙ্গারা দুটি উইকেট লাভ করেন।
তবে মাত্র ১২৯ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে টাইগারদের শুরুটা হয়েছিল ভীতি-জাগানিয়া। পানিয়াঙ্গারা ও চাতারার বোলিং তোপে পড়ে মাত্র ৫৮ রান তুলতেই টপ-অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান সাজঘরের পথ ধরেন। একে একে ফিরে যান তামিম (১০), আনামুল (৮), সৌম্য (২০) ও সাকিব (০)।
তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিককে নিয়ে ৩৫ রানের জুটি গড়ে দলকে প্রাথমিক বিপদ থেকে উদ্ধার করেন মাহমুদুল্লাহ। দলীয় ৯৩ রানের মাথায় মুশফিক (১১) ফিরে গেলেও টাইগারদের আর বিপদে পড়তে দেননি মাহমুদুল্লাহ। সাব্বির রহমানকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৩৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের নোঙরে ভিড়িয়েই মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ।
এই মুহূর্তে এখানে কোনো মন্তব্য নেই, আপনি কি একটি মন্তব্য দেবেন?
মন্তব্য লিখুন