চাষীর ছেলে সেরা ফাইটার!
ক্রিকেটের ফিল হিউজ আনন্দ-বেদনার এক মিশ্র কাব্যের নাম। মাত্র ২৫ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়াত্যাগ করে তা যেন আরো বেশি করে সত্য হিসেবে প্রমাণ করলেন অসি তরুণ।
হিউজ ১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর নিউ সাউথ ওয়েলশের ম্যাকভিলেতে এক কলা চাষীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ক্রিকেটের হাতেখড়িও সেখানেই। এরপর দীর্ঘ আরাধনা শেষে ‘ব্যাগি গ্রিন’ পরে অস্টেলিয়ার হয়ে ২৬ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দর্শকদের একই সাথে পুলকিত ও হতাশ করেছেন অসি ওপেনার। যেখানে ৩২.৬৫ গড়ে ১৫৩৫ রান সংগ্রহ করেন হিউজ। তার সেঞ্চুরি সংখ্যা তিনটি।
নিখুঁত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে আনঅর্থোডক্স টেকনিকে বাল্যকালে হিউজকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের ভবিষ্যত হিসেবে ভাবা হতো। যদিও পরিণত ক্রিকেটে তার খুব বেশি স্বাক্ষর রাখতে পারেননি তিনি। কিন্তু তারপরেও এই কিছুদিন আগেই অস্টেলিয়ান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক হিউজকে নিয়ে একটা সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। তা হলো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কমপক্ষে ১০০টি টেস্ট খেলবে হিউজ। যদিও এই তথ্যটিও জানা ছিল মাইকেল ক্লার্কের যে, গেল বছরের জুলাই মাস থেকে দেশের জার্সিতে মাঠে নামা হয়নি এনএসডব্লিউ ব্যাটসম্যানের।
আসলে ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষিক্ত হওয়ার পর ইনজুরি, অধারাবাহিকতা এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ঔদাসিন্যের কারণে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৬ টেস্ট খেলা হয়েছে হিউজের। অথচ ওই একই সময়ে দ্য ইয়েলোরা খেলে ফেলেছে ৬৪টি টেস্ট। এক্ষেত্রে হিউজের জন্য বুমেরাং হিসেবে দেখা দিয়েছিল হোমপান টেকনিক। কারণ এ কারণে বোলারদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন তিনি। অথচ একই টেকনিকের স্বদ্যবহার করে নিজের ক্যারিয়ারকে আরো সামনেও নিতে পারতেন হিউজ।
এজন্য অনেক বিশুদ্ধবাদীরা হিউজকে নিয়ে সমালোচনা করত। তাদের প্রধান যুক্তি শট বলে দুর্বলতা আছে অসি ওপেনারের। বিশেষত হিউজের অভিষেক সূর্যালোক তাই জানান দিয়েছিল। কেননা ডারবানে ডেল স্টেইন, জ্যাক ক্যালিস, মাখায়া এনটিনিদের বিপক্ষে অনেক সংগ্রাম করেছিলেন তিনি। আবার কিছু অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকের দাবি তিন নম্বরে ঠিক শুট করেন না ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। কিন্তু অসি সাবেক ক্রিকেটাররা তা মানতে নারাজ। এই তালিকায় আছেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। বন্ধুকে নিয়ে তার ভাষ্য, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই বয়সেই তার ২৬টি শতক রয়েছে। যখন আমার মাত্র একটি শতক ছিল।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নয় হাজারের অধিক রান আছে হিউজের। যিনি ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে দারুণ পারফর্মকরে কিংবদন্তি ডন ব্যাডম্যানের সঙ্গে উপমিত হয়েছিলেন। সতীর্থরা তার নাম দিয়েছিল ‘লিটল ডন’। আর অস্ট্রেলিয়ার এক ক্রিকেট ম্যাগাজিন লিখেছিল, ‘আমাদের বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা নক্ষত্র আছে (ডন ব্রাডম্যান), আছে সেরা ফাইটারও।’
মাত্র ২৫ বছর বয়সেই শীতের সকালের শিশিরে মতো ঝরে পড়লেন প্রতিভাবান অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। এ নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটার। তাতে বইছে শোকের ঝড়।
ভারতীয় ক্রিকেটার রোহিত শর্মা লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখের দিন। বন্ধু পরপারে ভালো থেকো তুমি। অন্যদিকে শিন অ্যাবটকেও শক্ত থাকতে হবে।’
ইংল্যান্ডের জোস বাটলার বলছেন, ‘শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছি। পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ফিলের জন্য প্রার্থনা করছি।’
কিলার ডেভিড মিলার লিখেছেন, ‘জেগে ওঠার জন্য খুবই দুঃখের সংবাদ। হিউজের জন্য শুভকামনা।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ হার্টহিটার ক্রিস গেইল লিখেছেন, ‘শুনতেও খুব খারাপ লাগছে। শান্তিতে থাকো বন্ধু। হিউজের পরিবারকে শোক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
ভারতের সুন্দর রমন লিখেছেন, ‘দুঃখের দিন।’ ফাওয়াদ আলম লিখেছেন, ‘গেল সপ্তাহে তার বিপক্ষে খেলার সময় ভেবেছিলাম খেলার পরে অনেক সময় হিউজের সঙ্গে কাটাবো। কিংবদন্তিরা অমর থাকে।’
ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম লিখেছেন, ‘গোটা ক্রিকেট বিশ্বের জন্য দুঃখের দিন।’
দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স লিখেন, ‘হৃদয় ভেঙে যাওয়ার মতো খবর। অন্ধকার একটি দিন। তোমাকে মিস করবে ক্রিকেট বিশ্ব।’
ব্রেট লি লিখেছেন, ‘কোনো শব্দ দিয়েই ব্যাখ্যা করা যাবে না। শান্তিতে থেকো বন্ধু।’
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ান শেফিল্ড শিল্ডের খেলায় আহত হন হিউজ। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলসের ঘরোয়া ম্যাচে খেলার সময় মাথায় চোট পান হিউজ। বিপক্ষের বোলার সিন অ্যাবট একটি বাউন্সার দেন। মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হেলমেটের ওপর দিয়েই ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বলটি লাগে কানের পাশে। হিউজ পড়ে যান পিচের ওপর। জ্ঞান হারান। তারপর থেকেই তিনি অচেতন ছিলেন। তাকে সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অপারেশন করেও কোনো লাভ হলো না।
এই মুহূর্তে এখানে কোনো মন্তব্য নেই, আপনি কি একটি মন্তব্য দেবেন?
মন্তব্য লিখুন