গার্দিওলার প্রতি কৃতজ্ঞ মেসি
মেসি যে আজকের বিশ্বসেরা ‘মেসি’তে রূপান্তরিত হয়েছেন, কার অবদানে? অনেকেই চোখ বন্ধ করে হয়তো বলে দেবেন পেপ গার্দিওলার নাম। হ্যাঁ, যারা এমনটি জবাব দেবেন, তারা ভূল জবাব দেবেন না। কারণ, মেসি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, আজকের এই মহাতারকা হওয়ার পেছনে যে লোকটির সবচেয়ে বেশি অবদান, তিনি হচ্ছেন সাবেক বার্সা কোচ পেপ গার্দিওলা।
পেপ বার্সা ছেড়ে গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলো। তিনি এখন জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের কোচ। এমনকি এ সময়ের মধ্যে মেসির বার্সেলোনার মুখোমুখি হয়েছিল গার্দিওলার বায়ার্নও। মুখোমুখি লড়াইয়ের সময় মেসি-গার্দিওলা নিয়ে বেশ কথা এসেছিল মিডিয়ায়। ওই সময় মেসি নিজেও এসব কথা বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। খেলার মাঠে যেই হোক, সবাই প্রতিপক্ষ। এখানে ভিন্ন কিছু নেই।
কিন্তু খেলার মাঠের বাইরে যে এখনও মেসির হৃদয়-মন জুড়ে শুধু গার্দিওলা, এটা কয়জন জানতো? যদি না মেসি নিজে তা প্রকাশ করতেন! শুধু তাই নয়, নিজেই জানালেন- এখনও সাবেক কোচের সঙ্গে অসাধারণ সম্পর্ক রয়েছে তার। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বাস করেন, পেপ গার্দিওলার মতো কোচের অধীনে থাকতে পারার কারণেই ধীরে ধীরে তিনি বিশ্বসেরা হিসেবে পরিণত হতে পেরেছেন।
জার্মানির ক্রীড়া সামগ্রি নির্মাতা এডিডাসের বি দ্য ডিফারেন্স প্রচারনার অংশ হিসেবে একটি সাক্ষাৎকারে এভাবেই গার্দিওলার প্রশংসা করেন মেসি। একই সঙ্গে তিনি জানালেন, অদূর ভবিষ্যতে স্ট্রাইকার কিংবা উইঙ্গারের চেয়ে মিডফিল্ডার হিসেবেও তাকে দেখা যেতে পারে। নিরেট একজন মিডফিল্ডার হিসেবেই নাকি ভবিষ্যতে খেলতে চান মেসি।
গার্দিওলা সম্পর্কে মেসি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের ডাগআউটে তাকে দেখাটা বেশ অস্বস্তিকরই আমার জন্য। সবাই জানেই, তার সঙ্গে আমার কতটা গভীর সম্পর্ক এবং আমার জন্য তিনি যা করেছেন, সব সময়ই আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি জানি, একজন পূর্ণাঙ্গ ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠতে তিনি কিভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আর বার্সাকে একটি দল হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার কী অবদান সেটাও সবাই জানে। আমি সব সময়ই তার মঙ্গল কামনা করবো।’
গত মৌসুমে অসাধারণ খেলেছিলেন মেসি। বার্সাকে জিতিয়েছেন ট্রেবল শিরোপা। পুরো মৌসুমে করেছেন ৫৬টি গোল। এরই মাঝে হয়েছেন গার্দিওলার প্রতিপক্ষ। যখন মাঠে নামেন প্রিয় কোচের প্রতিপক্ষ হয়ে, তখনকার অনুভুতি সম্পর্কে মেসি বলেন, ‘এমন কোন ব্যক্তির বিপক্ষে খেলতে নামলে অবশ্যই তখন একটু সমস্যা হবে। তবে, এটা পেশাদারিত্বের সময়। সুতরাং, খেলার ওই সময়টা আপনাকে আবেগ বন্দী করে রাখতে হবে। কারণ, দলকে তখন জেতাতেই হবে। এটা আমার জন্য যেমন সত্য, তেমনি তার জন্যও সত্য।’
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন দলের স্টাইল সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তার। উত্তরটাও ছিল বেশ চমক জাগানিয়া এবং অনুমিতই। মেসি বললেন, ‘পেপ যেভাবে বায়ার্নকে গড়ে তুলেছেন, সেটা বার্সাকে যেভাবে গড়েছিলেন- ঠিক তেমনিই যেন। তবে, পার্থক্যটা হলো- পেপের হাতে তো আর বার্সার ফুটবলাররা নেই! একারণে সাফল্যের মাত্রাটাও ভিন্নধর্মী। পেপ সব সময়ই ভিন্ন এবং নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। ফুটবলের জন্যই এটা খুব ভালো দিক। ইউরোপে তো আমরা শক্তিশালি প্রতিদ্বন্দ্বীতাই চাই। এ কারণে আমি খুশি যে, পেপ আরেকটি ফুটবল পাওয়ার হাউজ তৈরী করে ফেলেছেন। যারা লা লিগার শক্তিশালি দলের বিপক্ষে লড়াই করতে সক্ষম। জুভেন্তাসও একই মানের গড়ে উঠেছে। আপনি কোনভাবেই ইতালিয়ান দলগুলোকে খাটো করে দেখতে পারবেন না। এক সময় তো ইতালিই ইউরোপে আধিপত্য করেছে। যদিও, তারা এখন কিছু কঠিন সময় পার করছে। কিন্তু কিভাবে লড়াই করতে হয়, তা তারা সব সময়ই দেখিয়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, ফ্রেঞ্চ লিগও এখন ভালোমানের ফুটবলারদের টেনে নিচ্ছে। সুতরাং, এসব লিগও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
সর্বশেষ মেসি জানালেন, তিনি ভবিষ্যতে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যে কোন পজিশনে খেলতে চাই। তাতে যদি দলের লাভ হয়!’
এই মুহূর্তে এখানে কোনো মন্তব্য নেই, আপনি কি একটি মন্তব্য দেবেন?
মন্তব্য লিখুন