ইংল্যান্ডের দাপটে ক্লার্কের বিদায়!
টার্গেট ছিল ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে। কিন্তু সেটা আর হয়নি। নটিংহ্যামে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের তৃতীয় দিনেই সব ফয়সালা হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়াকে ইনিংস ও ৭৮ রানে পরাজয়ের লজ্জা দিয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। সেই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখে ৩-১ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজও নিশ্চিত করল অ্যালিস্টার কুক শিবির।
প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। যার খেসারত বড় ব্যবধানে হেরেই দিল ক্লার্ক শিবির। জবাবে জো রুটের সেঞ্চুরিতে নয় উইকেটে ৩৯১ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করেছিল অসি ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৫৩ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস। ওয়ার্নার সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন। রজার্স ৫২, ভোজেস অপরাজিত ৫১ রান করেন। অধিনায়ক ক্লার্ক আনলাকি থার্টিনেই বিদায়।
বলতে গেলে দুই দিনেই হেরে গেল অস্ট্রেলিয়া। কারণ তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া খেলতে পেরেছে মাত্র ওভার দশেক। সাত উইকেটে ২৪১ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার তৃতীয় দিনে তারা যোগ করতে পেরেছে মাত্র ১২ রান।
প্রথম ইনিংসে আট উইকেট নিয়ে অসি শিবিরে একাই ঘূর্নিঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। তবে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ব্রড পেয়েছেন মাত্র একটি উইকেট। তবে এদিন ঝলসে উঠেছিলেন বেন স্টোকস ও মার্ক উড। ছয় উইকেট নেন স্টোকস। আর উড নেন ৩ উইকেট।
তবে দুই ইনিংস মিলে ৯ উইকেট নেয়া স্টুয়ার্ট ব্রডই হয়েছেন ম্যাচ সেরা।
দুর্ভাগা মাইকেল ক্লার্ক। অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন হিসাবে সবচেয়ে বেশীবার হারার রেকর্ডটি এখন তার, সাতবার। ১৯৬৫ সালের পর অ্যাশেজ সিরিজে অসি ক্যাপ্টেন হিসাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান রেটও ক্লার্কের, ১৬.৭১। সবচেয়ে কম রেট রিকি পন্টিংয়ের, ১৬.১৪।
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সাত ব্যাটসম্যান ১০এর উপরে রান করতে পারে নাই। অ্যাশেজ সিরিজে দীর্ঘ ৭৯ বছর এমন চিত্র দেখতে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। বলতে গেলে লজ্জার এক সিরিজই শেষ করতে যাচ্ছে ক্লার্ক শিবির।
আগামী ২০ আগষ্ট ওভালে অনুষ্ঠিত হবে অ্যাশেজ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট। ঐ ম্যাচটি খেলেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুড বাই জানাবেন ৩৪ বছর বয়সী ক্লার্ক।
২০০৪ সালে টেস্ট অভিষেক। এরপর খেলেছেন ১১৪ ম্যাচ। রান ৮৬২৮, গড় ৪৯.৩০, ২৮ সেঞ্চুরি, ২৭ হাফ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩২৯। ২০১১ সালে পন্টিংয়ের হাত থেকে পান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব। টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে ৪৬ ম্যাচে জিতেছেন ২৩টিতে, হার ১৬টিতে।
গত বছরের জানুয়ারীতে তার নেতৃত্বেই অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডকে ৫-০তে হোয়াইটওয়াশ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক হিসাবে দুটি সেঞ্চুরিও করেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর থেকেই কেমন জানি ছন্দপতন। শেষ ১৮ ইনিংসে মোট রান ৩৮৮। ব্যর্থতার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে চলতি অ্যাশেজে। যেখানে ইংল্যান্ডের কাছে নাস্তানাবুদ অস্ট্রেলিয়া। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছে ইংল্যান্ড। আর অসি অধিনায়ক হিসাবে পরাজয়ের জ্বালায় জ্বলছেন মাইকেল ক্লার্ক। ব্যাট হাতেও কিছু করতে পারেননি। পুরো সিরিজে তার ব্যাটিং গড় মাত্র ১৬। আর তাইতো কঠিন এক সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছেন অসি অধিনায়ক। গত মার্চে অবসরে যান ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে। এবার বিদায় জানালেন সাদা পোশাককেও।
অস্ট্রেলিয়ার সফলতম অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন ক্লার্ক, ২০১১ সালে। তার প্রথম সফরই ছিল বাংলাদেশে। এবারও যখন আরেকটি বাংলাদেশ সফর দুয়ারে, তার আগেই ক্রিকেটকেই বিদায় বলে দিলেন ক্লার্ক, ‘আমি আর একটি মাত্র টেস্ট খেলবো। এরপরই আমার ক্যারিয়ার শেষ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। ঝড়ের মুখে আমি এখন জাহাজ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যেতে চাই না। তাই আমি ওভালের শেষ টেস্টটা খেলবো।’
অ্যাশেজের পর নির্বাচকরা যে দলের উপর ছুরি চালাতেন সেটা নিশ্চিত। তোপটা ক্লার্কের উপরও পড়তো। তিনি সেই সুযোগ নির্বাচকদের না দিয়ে নিজেই সসম্মানে প্রস্থান করলেন। মাত্র চারমাস আগেই অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জেতানো ক্লার্ক নিজের পারফরম্যান্সে নিজেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। তার ভাষায়, ‘আমি এভাবে চলে যেতে চাইনি। এই সিরিজ এবং গত ১২ মাসে যেভাবে খেলেছি সেটা আমার কাছেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। এটা খুবই হতাশাজনক।’
বিশ্বকাপ জিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে ক্লার্কের বিদায় ছিল রোমাঞ্চকর। সেই ক্লার্ককে মুদ্রার অপর পিঠও দেখতে হলো টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলার সময়। হয়তো মনোকষ্ট থেকে তিনি বলে দিলেন, ক্রিকেট থেকে অনেক পেয়েছেন, বিনিময়ে কিছুই দিতে পারেননি, ‘আমি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একশ’র বেশি টেস্ট খেলেছি। এটা আমার পরম সৌভাগ্য। সবসময়ই বলে এসেছি ক্রিকেট আমার কাছে ঋণী নয়, আমি ক্রিকেটের কাছে ঋনী। এতদিন খেলতে পেরেছি বলে আমি কৃতজ্ঞ।’
এই মুহূর্তে এখানে কোনো মন্তব্য নেই, আপনি কি একটি মন্তব্য দেবেন?
মন্তব্য লিখুন